শীতকালীন সবজি চাষের সময়
আজ আমি আপনাদের জানাবো শীতকালীন সবজির চাষের নির্দিষ্ট সময়। এবং কোন কোন সময় কি কি সবজি লাগাবেন, কোথায় কি লাগাবেন, কি কি সবজি লাগালে লাভবান হবেন, সমস্ত বিষয় বিস্তারিত জানাবো এই আর্টিকেলে।
এছাড়াও জানাব বারোমাসি সবজি চাষের তালিকা। সেগুলো পুরো বারো মাসে পাওয়া যায়। যার মধ্যে কিছু সবজি প্রচুর পুষ্টিকর কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা। সামনে আমাদের শীতকাল আসতেছে এগুলো জানা আমাদের জন্য অনেক জরুরী। এবং কিভাবে সবজি চাষ করলে আপনি লাভবান হবেন। এইসব সমস্ত বিষয় জানতে আমাদের এই আর্টিকেল জুড়েই থাকুন।
পোস্ট সূচিপত্র
শীতকালীন সবজি কি কি
শীতকালীন সবজি কি কি, শীতের শুরু হয় নানা আয়োজনে। বাঙালির পিঠা উৎসব, খেজুর রস, খেজুরের গুড়, নতুন নতুন শাকসবজির সমাহার। শীতের এই সময় অনেক ধরনের শাকসবজি পাওয়া যায়। তার মধ্যে বেশি পাওয়া যায় ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, গাজর, সিম, টমেটো, পেঁয়াজ পাতা, মটরশুটি, বিভিন্ন শাক, ব্রেকোলি ইত্যাদি। শীত মৌসুমে এসবের সাধ অনেক বেশি থাকে, তেমনি পুষ্টিগুণ বেশি থাকে।
শীতকালে এসব মৌসুমী শাকসবজি বা ফল গ্রহণের মাধ্যমে সহজে শরীরের চাহিদা মোতাবেক পুষ্টি উপাদান, বিশেষ করে ভিটামিন ও মিনারেলসের চাহিদা পূরণ সম্ভব হয়। প্রায় সব শাক-সবজিতেই থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান, যা ত্বকের বার্ধক্যরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এবং ত্বককে সজীবতা ধরে রাখে। এছাড়া প্রায় সব শাক-সবজিতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে যা দেহের পানির ঘাটতি পূরণের সক্ষম।
তাহলে চলুন শীতকালীন কিছু সবজির গুনাগুন সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক--
টমেটোঃ টমেটো একটি জনপ্রিয় সবজি। ক্যালরির ভরপুর এই সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। কাঁচা ও এই দুই অবস্থাতে টমেটো খাওয়া যায়। টমেটোতে উপস্থিত ভিটামিন সি ত্বক ও চুলের রক্ষভাব দূর করে, এবং চুলকে দেয় সুন্দর ও চকমকে। যে কোন চর্মরোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। টমেটোতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট । যা প্রাকৃতিক ক্ষতিকর আলট্রাভায়োলেট রশ্মির বিরুদ্ধে লড়াই করে। টমেটোতে লাইকোপিন আছে যা শরীরের মাংস পেসিকে করে মজবুত, দেহের ক্ষয় রোধ করে, দাঁতের গোড়াকে করে আরো শক্তিশালী চোখের পুষ্টি যোগায়।
ফুলকপিঃ শীতের সুস্বাদু সবজি ফুলকপি। ফুলকপিতে রয়েছে ভিটামিন এ বি ওসি। এ ছাড়া আইরন ফসফরাস, পটাশিয়াম ও সালফার আছে প্রচুর পরিমাণে। এই সবজিতে আইরন রয়েছে উচ্চমাত্রায়। রক্ত তৈরিতে আয়রন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গর্ভবতী মা বারন্ত শিশু ও অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করা মানুষের জন্য বেশ উপকারী। ফুলকপিতে কোন চর্বি নেই কোলেস্টেরল মুক্ত। ফুলকপি তাই বৃদ্ধি ও বর্জনের জন্য উপযোগী। ফুলকপিতে থাকা ভিটামিন এ ও সি শীতকালীন বিভিন্ন রোগ যেমন জ্বর,কাশি, সর্দি ও টনসিল প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে এই ফুলকপি ফুলকপি ভিটামিন এ আমাদের চোখের জন্য অনেক উপকারী।
ধনেপাতাঃ ধনেপাতা রয়েছে ভিটামিন সি এ ও ফলিক এসিড যা ত্বকের জন্য যথেষ্ট প্রয়োজনীয়। এই ভিটামিনযুক্ত তোকে প্রতিদিনের পুষ্টি যোগায়, চুলের ক্ষয়রোধ করে, এই ধনেপাতা সবাই খেতে পারে না কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা যে ধনে পাতার মধ্যে এত পুষ্টিগুণ আছে। তাই আমরা শীতকালীন এই সময়টা ধনেপাতা খাওয়ার চেষ্টা করব। ধনেপাতা শীতকালীন ঠোঁটফাটা, ঠান্ডা লেগে যাওয়া, জ্বর জ্বর ভাব দূর করতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে। ধনেপাতায় রয়েছে ভিটামিন সি ভরপুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।যা নানাবিদ ওষুধের ভূমিকা পালন করে।
শিমঃ সিম সুস্বাদু একটি খাবার। শিম কিন্তু আমাকে খেতে অনেক ভালো লাগে। এটাই সবজি হিসেবে এবং এর শুকনো বীজ ডাল হিসেবে খাওয়া হয়। এটির আঁশ-জাতীয় অংশ খাবার পরিপাকে সহায়তা করে, এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ডায়রিয়া প্রকোপ কমায়। রক্তে কোলেস্টেরল মাত্রা কমায়, যা হৃদ রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে পাকস্থলী নিউকুরিয়াসহ মেয়েদের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে, শিশুদের অপুষ্টি দূরীভূত করে। শিমের ফুল রক্ত আমাশয়ের চিকিৎসার ব্যবহার করা যায়।
মূলাঃ শীতের আরেকটি পরিচিত সবজি হলো মূলা। মূলা কাচ এবং রান্না উভয় অবস্থায় খাওয়া যায়, মুলার পাতায় ভিটামিনের পরিমাণ 6 গুন বেশি। মূলা বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধের সাহায্য করে এর বিটা-ক্যারোটিন হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। এটি শরীরের ওজন হ্রাস করে, আনসার ও বদ হজম দূর করতে সাহায্য করে। কিডনি ও পিত্তথলিতে পাথর তৈরি প্রতিরোধে হুপিং কাশি কোষ্ঠকাঠিন্য বিভিন্ন রোগ নিরাময় ভূমিকা পালন করে। এজন্য আমরা শীতকালীন সময়ে মূলা খাব।
শীতকালীন সময় আরো বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি পাওয়া যায়। সেগুলো আমরা নিয়মিত খাওয়ার চেষ্টা করব। এতে আমাদের শরীর ও মন দুইটাই ভালো থাকবে এবং আমাদের দেহকে সুস্থ এবং স্ট্রং রাখবে।
বারোমাসি সবজির তালিকা
বারোমাসি সবজির তালিকা, আমাদের দেশে এখন প্রায় সব শাকসবজি বারো মাসে পাওয়া যায়।হাতেগোনা কয়েকটা শাকসবজি সিজন অনুযায়ী পাওয়া যায়। ছয় ঋতুর দেশ হিসেবে পরিচিত আমাদের এই দেশ। বৈচিত্র্যের কারণে এদেশে মাটিতে ফলে নানা রকম ফল ও সবজি। আর আমাদের দেশে কৃষির মৌসুম তিনটি- খরিফ-১, খরিফ ২, ও বরি। উৎপাদনের উপর ভিত্তি করে যদিও কৃষি মৌসুমকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে, কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থান, আবহাওয়া, জলবাও এবং আমাদের প্রয়োজনের তাগিদে প্রতি মাসের প্রতিটি দিন কিছু না কিছু কৃষি কাজ করতে হয়।
বৈশাখঃ লালশাক, গিমা, কলমি, ডাটা, পাতা পেঁয়াজ, পাট শাক, বেগুন, মরিচ, আদা, হলুদ, ঢেঁড়স বীজ বপনের উত্তম সময়। সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চারা রোপন করা যায়। মিষ্টি কুমড়া, করলা, ধুন্দুল, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, চালকুমড়া, শসার মাচা তৈরি, যারা উৎপাদন করতে হবে। কুমড়া জাতীয় সবজির পোকামাকড় দমনের ব্যবস্থা ও শেষ প্রদান করতে হবে।
জৈষ্ঠঃ আগে বীজতলায় বহনকৃত খরিফ-২ এর সবজির চারা রোপণ, সেচ ও সার প্রয়োগ ও পরিচর্যা করতে হবে। ফলের চারা রোপনের গর্ত প্রস্তুত ও বয়স্ক ফল গাছ সুষম সার প্রয়োগ, ফলন্ত গাছের ফল সংগ্রহ করে বাজারজাতকরণে ব্যবস্থা করতে হবে। নবী কুমড়া জাতীয় ফসলের মাচা তৈরি, সেচ ও সার প্রয়োগ করতে হবে। শজিনা সংগ্রহ করতে হবে এবং গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চারা রোপন ও পরিচর্যা করতে হবে। ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল পটল, কাকরোল সংগ্রহ পোকামাকড় দমনের ব্যবস্থা করতে হবে।
আষাঢ়ঃ গ্রীষ্মকালীন বেগুন, টমেটো, কাঁচা মরিচের পরিচর্যা সিমের বীজবপন, কুমড়া জাতীয় সবজির পোকামাকড়, রোগ-বালায় দমন করতে হবে। আগে লাগানো বেগুন, টমেটো ও ঢেঁড়সের বাগান থেকে ফসল সংগ্রহ করতে হবে। খরিফ২ সবজির চারা রোপন ও পরিচর্যা, সেস, সার প্রয়োগ করতে হবে। ফলসহ ঔষধি গাছের চারা বা কলম রোপণ, খুঁটি দিয়ে যারা বেধে দেয়া, খাঁচা বা বেড়া দেয়া ও ফল গাছের সুষম সার প্রয়োগ করা।
শ্রাবণঃ আগাম রবি সবজি বাঁধাকপি, ফুলকপি, লেউ, টমেটো, বেগুনের বীজতলা তৈরি, বীজবপন শুরু করা যেতে পারে। শিমের বীজবপন, লালশাক ও পালংশাকের বীজবপন শুরু করা যেতে পারে। শিমের বীজ বপন, লাল শাক ও পালং শাকের বীজবপন করতে হবে। রোপণকৃত ফলের চারা পরিচর্যা, উন্নত চারা/কলম রোপণ, সার প্রয়োগ ইত্যাদি করতে হবে। আগে লাগানো ফলের চারার পরিচর্যাসহ ফলের উন্নত চারা বা কলম লাগানো, খুঁটি দেয়া, বেড়া দিয়ে চারা গাছ সংরক্ষণ, ফল সংগ্রহের পর গাছের অঙ্গ ছাটাই করতে হবে।
ভাদ্রঃ আগে লাগানো ফলের চারার পরিচর্যার সহ ফলের উন্নত চারা বা কলম লাগানো, খুঁটি দেয়া, বেড়া দিয়ে চারাগাছ সংরক্ষণ করতে হবে। আগাম রবি সবজি বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপি, টমাটো, বেগুন কুমড়া, লাউয়ের জমি তৈরি চারা রোপন, সার প্রয়োগ ইত্যাদি করতে হবে।
আশ্বিনঃ শিম, লাউ, বটবটির মাচা তৈরি বা পরিচর্যা করতে হবে। রসুন, পিয়াজের ফোন বীজবপন, আলু লাগাতে হবে। আগাম রবি সবজির চারা রোপণ, চারার যত্ন, সেচ, সার প্রয়োগ, বালাই দমনসহ নাবী রবি সবজির বীজ তলা তৈরি, বীজ বপন, আগাম টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপির আগাছা দমন করতে হবে।
কার্তিকঃ আলুর কইল বাধা ও আগাম রবি সবজির পরিচর্যা ও সংগ্রহ করতে হবে। মধ্যম রবি সবজি পরিচর্যা, সার প্রয়োগ ও সেস প্রদান করতে হবে। ফল গাছের পরিচর্যা, সার প্রয়োগ না করে থাকলে ব্যবহার মালচিং করে মাটিতে রস সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
অগ্রহায়ণঃ অন্যান্য রবি ফসল যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো বেগুন ওলকপি লালগমের চারার যত্ন, সার প্রয়োগ, সেচ প্রদান, আগাছা পরিষ্কার ও সবজির সংগ্রহ করতে হবে। ফল গাছের মালচিং এবং পরিমিত সার প্রয়োগ করতে হবে।
পৌষঃ যারা বাণিজ্যিকভাবে মৌসুমী ফুলে চাষ করতে চান তাদের এ সময় ফুল গাছের বেশি করে যত্ন নিতে হবে বিশেষ করে ষাঁড়ের উপরি প্রয়োগ করতে হবে। আগামও মধ্যম রবি সবজির পোকামাকড় ও রোগবালায় দমন এবং সবজি সংগ্রহ করতে হবে। নাবী রবি সবজির পরিচর্যা, ফল গাছের পোকামাকড় ও রোগবালায় দমন এবং অন্যান্য পরিচর্যা করতে হবে।
মাঘঃ আলু, পেঁয়াজ, রসুনের গোড়ায় মাটি তুলে দেয়া, সেস, সার প্রয়োগ, টমেটোর ডাল ও ফল ছাটা, মাধ্যম ও নাবী রবি সবজির সেস সার, গোড়াবাধা, মাচা দেওয়া এবং আগাম খরিফ-১ সবজির বীজতলা তৈরি বা মাদা তৈরি বা বীজ বপন করতে হবে। ফল গাছের পোকামাকড়, রোগ গলায় দমন ও অন্যান্য পরিচর্যা করতে হবে।
ফাল্গুনঃ আলো সংরক্ষণের বেশি যত্নবান হন। এক্ষেত্রে জমিতে আলো গাছের বয়স ৯০ দিন হলে মাটি সমান করে সমুদয় গাছ কেটে গর্তে আবর্জনা সার তৈরি করুন। এভাবে মাটির নিচে দশ দিন আলো রাখার পর অর্থাৎ রোপণের ১০০ দিন পর আলো তুলতে হবে। এতে চামড়া শক্ত হবে এবং সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়বে। আগাম খরিফ-১ সবজির চারা উৎপাদন ও মূল জমি তৈরি, সার প্রয়োগ করতে হবে। ফল গাছের গোড়ার রস থাকলে মাঝেমধ্যে শেষ প্রদান, পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন করা দরকার।
চৈত্রঃ মাটিতে রসের ঘাটতি হলে ফাল্গুন গুড়ি বা কমা ঝরে যায়। তাই এ সময় প্রয়োজনীয় সেস প্রদান, পোকামাকড় ও রোগবালায় দমন করা জরুরী। নাবী রবি সবজি উঠানো, বীর সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হবে। যেসব সবজির চারা তৈরি হয়েছে সেগুলো মূল জমিতে রোপন করতে হবে।
শীতকালীন সবজি ও ফুল চাষ
শীতকালীন সবজি ও ফুল চাষ, যারা শীতকালে ফুল চাষ করেন তারা জানেন শীতকালে ফুল চাষ কিভাবে করতে হয় শীতকালীন ফুলের মধ্যে রয়েছে- শিম,টমেটো,মরিচ,বেগুন,পেঁয়াজ, আলু গাজর, লালগম, ডাঁটা, লাল-শাক, কলমিশাক, পুঁইশাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, লাউ, শসা ইত্যাদি শীতকালীন সবজি চাষ করা হয়। অন্যদিকে ফুলের মধ্যে রয়েছে- নয়ন তারা, গাধা, জিনিয়া, কসমস, চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, সূর্যমুখী, ভারবেনা, পিটুনিয়া, স্যাভিয়া, গোলাপ, রজনীগন্ধা ইত্যাদি শীতকালীন ফুল চাষ হয়।
তাছাড়া, এই সময় করমচা কাউফল, বিলাতিগাব, আমলকী, শরিফা, ডালিম, কামরাঙ্গা, ইত্যাদি ফলের বীজ থেকে চারা তৈরি করা হয়। ভাল জাতের বীজ বা চারা নির্বাচন জরুরী। এক্ষেত্রে সরাসরি হর্টিকালচার সেক্টর ২০ নার্সারি থেকে বীজ চারা সংগ্রহ করতে হবে। বীজের জন্য যেকোন ভালো ব্র্যান্ড যেমন লালতীর যে কোন সবজি বীজ সংগ্রহ করা যেতে পারে।
চারা রোপনের জন্য জমিতে গোবর সার ও অন্যান্য জৈব সহ ইউরিয়া, টিএসপিও এমওপি ছাড় ভালোভাবে মিশিয়ে জমি ভালোভাবে মই দিয়ে সমান করে দিতে হবে। তারপর নির্দিষ্ট দূরত্বে গাছ লাগাতে হবে। ছাদ বাগানের জন্য বেগুন,মরিচ, ক্যাপসিকাম, টমেটো ঢেঁড়স গাছের জন্য ১০-১২ ইঞ্চি টপ বা জিওগো ব্যবহার করতে পারেন। চিচিঙ্গা, লাউ, শিম, বরবডি, করলা ইত্যাদি গাছের জন্য হাফ ড্রাম বা ২০-২৪ ইঞ্চি জিও ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে।
শাকসবজি বপনের জন্য বীজ তলার বীজ ছিটিয়ে দিতে হবে। পুঁইশাক, কলমিশাক, লেটুস ইত্যাদি লাইনে বপন করা ভালো। এমন ভাবে বপন করতে হবে যেন ইঞ্চিতে তিন চারটে বিষ পড়ে। প্রয়োজনে বীজের সাথে কিছু জৈব সার বা মাটি ঝুরঝুরে করে মিশিয়ে দিলে ছোট ছোট বীজ বপন করার সহজ হয়। তারা না বের হওয়া পর্যন্ত মাটি হালকা ভেজা রাখতে হবে। পাখির উপদব্য থেকে বাঁচতে নেট ব্যবহার করতে পারেন। বীজ অধিক পরিমাণ অঙ্কুরিত হলে কিছু শাক সময়ে সময়ে পাতলা করে দিতে হবে ছাদে বানানো বেড বা বয়া ক্যাডেট বা জিও ব্যাক বেডে ১ ফুট গভীর মাটি থাকলেই চলবে।
শীতকালীন সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো
শীতকালীন সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো, শীতকালীন সবজি চাষের জন্য ভালো মনের সবজি নির্বাচন করা জরুরী। জমিটি উঁচু এবং সুন্দরভাবে ব্যবস্থা করতে হবে জমি পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রয়োজন করতে হবে তাহলে চলুন শীতকালীন সবজি চাষের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জেনে নেওয়া যাক-
বীজ নির্বাচনঃ শীতকালীন সবজি চাষের জন্য ভালো জাতের বীজ নির্বাচন করা জরুরী। বীজ নির্বাচনের সময় বীজের মান, পরিপক্কতা এবং বীজের উৎস লক্ষ্য রাখতে হবে।
স্যার প্রয়োগঃ শীতকালীন সবজি চাষের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে সার প্রয়োগ করতে হবে। সাধারণ বীজ বপনের আগে জমিতে গোবর সার, ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের পর জমি ভালোভাবে চাপা দিয়ে দিতে হবে।
আগাছা দমনঃ শীতকালীন সবজি চাষে আগাছা দমন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আগাছা গাছের পুষ্টি উপাদান শোষণ করে এবং গাছের বৃদ্ধি ব্যবহৃত করে। তাই আগাছা দমনের জন্য সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সংগ্রহঃ শীতকালীন পরিপক্ক হলে সংগ্রহ করতে হবে। সবজি সংগ্রহের সময় সাবধানে সংগ্রহ করতে হবে যাতে সূর্যের নষ্ট না হয়।
বীজ বপনঃ বীজ বপণের জন্য সঠিক সময় নির্বাচন করা জরুরী। সাধারণত নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বীজ বপন করা হয়। বীজ বপণের সময় জমি ভালোভাবে মই দিয়ে সমান করে নিতে হবে। বীজ বপনের পর মাটি হালকাভাবে চাপ দিয়ে দিতে হবে।
সেস ও নিকাশী ব্যবস্থাঃ শীতকালীন সবজি চাষের জন্য সেচ ও নিকাশি ব্যবস্থা ভালোভাবে করতে হবে। সেচের মাধ্যমে গাছের পানির চাহিদা পূরণ করতে হবে এবং নিকাশির মাধ্যমে জমিতে জমে থাকা পানি অপসারণ করতে হবে।
পোকামাকড় ও রোগ দমনঃ শীতকালীন সবজি চাষে পোকামাকড় ও রোগের আক্রমণ হতে পারে। তাই পোকামাকড় ও রোগ দমনের জন্য সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
শীতকালীন সবজির সংগ্রহের পদ্ধতি জেনে নিন
শীতকালীন সবজি সংগ্রহের পদ্ধতি জেনে নিন, শীতের সবজি উৎপাদন বাড়ানোর সাথে সাথে সঠিক নিয়মে সবজি সংগ্রহ এবং বাজারজাতকরণের বিষয়টি জড়িত। এর ব্যতিক্রম হলে গুণগত মানের সবজি ও সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত হতে হবে। এর জন্য কিছু বিষয় রেখে সঠিক নিয়মে সঠিকভাবে সবজি সংগ্রহ করে বাজারজাতকরণে ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশল ১. টমেটো,বেগুন,শসা,কুমড়া এসব সবজিকে বোটা থেকে ধারালো ছুরি দিয়ে গাছ থেকে আলাদা করতে হবে। ২. চারাগাছ পাতলা করার সময় ছোট গাছ হিসেবে লালশাক, পালংশাক-এসবের শাক সংগ্রহ করতে হবে। ৩. পালং শাক, লাল শাক, মূলা শাক সংগ্রহের সময় সম্পূর্ণ গাছটি শিখরসহ উপরে তুলতে হবে। ৪. শাক হিসেবে ব্যবহারের জন্য পুইসাগর লাউয়ের ডগা হাঁটার সময় গাছের অংশ কেটে সংগ্রহ করতে হবে। ৫. বিভিন্ন সবজি সংগ্রহে উপযোগী সময় উপযুক্ত অবস্থাভেদে সংগ্রহ করতে হবে। ৬. সবজির ফল যথেষ্ট কচি অবস্থায় পরিপূর্ণ আকার এবং রং প্রাপ্তির পর সংগ্রহের ব্যবস্থা নিতে হবে।
ফল সংগ্রহের নিয়ম ঢেঁড়সঃ কোমল ও কচি অবস্থায় ঢেঁড়সের ফল তুলতে হবে। তা না হলে ফল শক্ত ও খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ফল বের হওয়া ৩-৫ দিন পর ঢেঁড়স খাওয়া উপযোগী হয়। ফল তোলা না হলে কাণ্ড বাড়ে না এবং ফলন কম হয়।
সতর্কতা অবলম্বনঃ ১. হাত দিয়ে সবজি সংগ্রহ করা যাবে না। এতে গাছের ক্ষতি হয়। তাই ধারালো ছুরি বা ক্লিপারদের সংগ্রহ করা উচিত। সংগ্রহ করে ফসল তোলার পাত্রে রাখতে হবে। পরে বাজারজাতকরণ কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পাদন করতে হবে।
২. মাঠে থাকা অবস্থায় সংগ্রহের সময় সবজি গায়ে ধুলাবালি লাগাতে পারে। এর জন্য সংগ্রহের পরি পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিলে নতিয়ে পড়ার সম্ভাবনা কমে। তবে পরিষ্কার পানিতে ধোয়া উচিত নয়। কেননা রোগ জীবাণু আক্রমণে আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
৩. কাছে বা দূরের বাজারে পাঠানোর আগে খুব ধারালো ছুরি দিয়ে ছাঁটাই করতে হবে। আকর্ষণ ও মূল্য বাড়ানোর জন্য সলিং এবং ক্লোজিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সবজি ভেদে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করে গ্রেট করার ব্যবস্থা দিতে হবে। রসালো সবজি সংগ্রহের পরও শ্বসন প্রক্রিয়া চলে। তাই ঠান্ডা করে দাও শূন্য করে অল্পসময়ের জন্য হলেও তাপ সরবরাহ ব্যবস্থা দিতে হবে।
৪. দূরের পথে সবজি টাটকা রাখার জন্য মোড়ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিছু সবজি খুব পাতলা ও স্বচ্ছ পলিথিন এর ব্যাগে রাখলে নীতিয়ে পড়া কমে যায়। খুব পাতলা পলিথিনের ভেতর দিয়ে বাতাস চলাচল করতে পারে। তাই শাক, শিম, লেটুস, ধনিয়া পাতা কে মোড়কাইয়নের ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫. মোড়কাইয়নের পর পরিবহনের সময় সবজিতে যেন আঘাত না লাগে; সেজন্য বক্সে করে চালান দেওয়া উচিত। পরিবহনের সময় ট্রাকের ও ট্রেনের বগিতে পরিচ্ছন্নতা ও বাতাস চলাচলের বিশেষ ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
লেখকের শেষ কথা
আমি আশা করি উপরের আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা অনেক সুন্দর একটা ধারণা পেয়েছেন যে, শীতকালের সময়ে কি কি সবজি চাষ করতে হয়। এবং সবজি চাষের নির্দিষ্ট সময় এবং বাজারজাতকরণ এবং কিভাবে সবজি চাষ করতে হবে। এবং কিভাবে সারাক্ষণ করতে হবে। তা আমি আপনাদের অনেক সুন্দর ভাবে বুঝাতে পেরেছি বলে মনে করি। যদি আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগে অবশ্যই শেয়ার করতে ভুলবেন না এবং কমেন্ট বক্সে আপনার মন্তব্য লেখা যাবেন। আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ!
আবির ইন-ফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url