শীতের সকাল নিয়ে কিছু কথা
বাংলাদেশ একটি ছয় ঋতুর দেশ ছয় ঋতু হলো- গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত, বসন্ত।বাংলাদেশের সাধারণত নভেম্বর, ডিসেম্বর ,জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এই কয় মাস শীতকাল, শীতকাল প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে অনেক সুন্দর একটা সময়, ছোট থেকে বড় সবাইকে শীতকাল অনেক আনন্দ দেয় এবং সবাই শীতকালে পছন্দ করে, আজকে আমি আপনাদের শীতের সকাল নিয়ে কিছু কথা আলোচনা করব- খুঁটিনাটি জানতে আমার সাথেই থাকুন।
বাংলাদেশের শীত মনে হার কাপানো শীত, সকাল কতই না মধুর, কতই না সুন্দ, কার না ইচ্ছা করে শীতের দিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে সকালে যে আবহাওয়া উপভোগ করার, কিন্তু প্রচন্ড শীতের কারণে লেপের ভিতর থেকে উঠতে মন চায় না, শীতের সকাল নিয়ে আরো সুন্দর সুন্দর কিছু জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।
সুচিপত্রঃ
গ্রামের শীতের সকাল
গ্রামের শীতের সকাল, সবাইকে জানাই অগ্রিম শীতের শুভেচ্ছা, শীতের সকালের কথা মাথায়
আসলেই মনে পড়ে গ্রামের শীতের সকালের কথা। গ্রামের শীতের সকাল মানেই গাছের পাতা
থেকে শিশির ঝরা টুপটাপ শব্দ আর পাখিদের কলরবে আনন্দিত শীতে অতীত আমার গ্রামীন
জীবনযাত্রা। পুবের জানালা ভেদ করে সূর্যের আলোর ছোঁয়ায় ভোরবেলা ঘুম ভাঙত, কিন্তু
কনকনে শীতের কারণে লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকা হঠাৎ হিমেল বাতাসে ভেসে আসা মিষ্টি
মুগ্ধ করে রাখত,জ্বাল দিচ্ছে মা চাচীরা স্মৃতির নানা পিঠাপুলি তৈরি ও গল্প চলছে।
অন্যদিকে শিশির ভেজা মেঠোপথে একদল শিশু খালি পায়ে হেঁটে বেড়ায়, কেউবা রসের ভার
নিয়ে ছুটে চলা, এ যেন শীতের সকালকে এক নতুন রূপে তুলে ধরে, শীতের সকালে যেদিকে
দুচোখ যায় শুধু প্রশান্তি আর প্রশান্তি, কি অপরূপ প্রকৃতি আবার কিছুটা পথ এগিয়ে
দেখা যায় যান্ত্রিক কোলাহল কৃষক ও শ্রমিক চলে যায় ক্ষেতের কাজে কাঁধে থাকে
লাঙ্গল-জোয়াল, মই। কেউবা কোদাল কাঁধে নিয়ে যায়, শীতের সকালে কুয়াশার মাঝে কখন
যেন সকাল থেকে দুপুর হয়ে যায় টেরি পাওয়া যায় না, শীতের সকাল নিয়ে আসলে বলার
কোন শেষ নেই, যতই বলতেছি মনে হয় বলতে ইচ্ছা করতেছে। গ্রামের শীতের সকাল সবাইকে এনে
দেয় প্রশান্তির ছোঁয়া।
আবার কোথাও কোথাও আগুন পোহানোর মনোমুগ্ধকর দৃশ্য চোখে পড়ে। শীতের সকালে প্রধান
আকর্ষণ পেঁয়াজ-রসুনের সবুজক্ষেত, সরিষা ফুলের হলুদ মাঠ মাচায় ঝুলে থাকা শিম
লাউয়ের বাহারি ফুল। সকালের সূর্যালোক যেন তার নিপুন হাতে প্রতিটি উদ্ভিদ ও পুষ্পকে
নব রূপে সাজিয়ে তোলে। শীতের সকালে গ্রামের প্রকৃতি এক কথায় ও নির্বাচনীয়। এ সময়
গ্রামের পরিশ্রমী মানুষের একটু আরাম করার জো নেই। নিজের মানুষের জন্য শীতের সকাল
খুবই কষ্টকর। শীত নিবৃত্তির মতো দরকারী কাপড়চোপড় অনেকের থাকে না। খুব সকালে তাদের
মাঠে-ঘাটে কাজ করতে যেতে হয় কিষাণ বধূরাও তখন ধান সিদ্ধ, সিদ্ধ ধান শুকানো ধান ভাঙ
ধান ভানা রান্নাবান্না ইত্যাদি নানা কাজে ব্যস্ত থাকে। তাছাড়া শীতকালে গ্রামগঞ্জে
ফেরিওয়ালাদের দেখা যায়। এরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে মোইয়া-মুরকি নানা ধরনের মিঠাই
-মিষ্টি, খেজুরের রস ইত্যাদি বিক্রি করে থাকে, এসব নিয়েই আমাদের গ্রামের শীতের
সকাল।
শীতের দিন সকালে সবাই খুঁজে রোদের ছোঁয়া
শীতের সকালের সবাই খোঁজে রোদের ছোঁয়া, কে না চায় শীতের দিন সকালবেলা শরীরে একটু
রোদের ছোঁয়া লাগাতে। সকালে ঘুম থেকে উঠে সাথে সাথে রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে যায়, কি
যে সকালের রোদ মিষ্টি সবাই রোদের মধ্যে গল্প আড্ডা জমায়, কেউবা সেই রোদের মধ্যে
এসে সকালের নাস্তা সেরে ফেলে, শীতের সকালে রোদের দেখা পাওয়া মানে এক আনন্দের বিষয়
শীতের সকালের রোদ যদি না পাওয়া যায় সবার মন খারাপ, সবাই শীতে কাঁপতে থাকে। আর বলে
কখন যে একটু রোদ উঠবে। রোদ উঠলেই সবাই রোদের মধ্যে দৌড়ে যায় শরীরে রোদ লাগানোর
জন্য, আসলে বলতে গেলে কি শীতের সকালের কথা মাথায় আসলেই সকালের সেই মিষ্টি রোদের
কথা মনে পড়ে, যা মনে এনে দেয় প্রশান্তির।
শীতের সকালে শরীরে মিষ্টি রোদের ছোঁয়া লাগাতে চাই না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বেশ
কঠিন শুধু শীতের সকালে কেন, শীতের সময় দুপুর কিংবা বিকেলেও রোদ লাগাতে পছন্দ করে
শীতের সময় অনেকেই শীতের মিষ্টি রোদ থেকে একটু উষ্ণতা পাওয়ার চেষ্টা করে। যদিও
শীতের রোদের প্রখরতা কম থাকে শীতের সময় আবহাওয়ার জলীয় বাষ্প খুব কম থাকে বলে,
অতি বেগুনি রশ্মি কোন বাধা না পেরিয়ে সরাসরি চলে আসে, এজন্য শীতকালে অতিবেগুনি
রশির ক্ষতিকর প্রভাব বেশি থাকে বছরের অন্য সময়ের তুলনায় শীতকালের আবহাওয়া জলীয়
বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে এই জলীয় বাষ্প অতিবেগুনি রশির ক্ষতির প্রভাব কমিয়ে দেয়
আর এ কারণেই শীতের সময় যারা আরামে রোদ লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায় তাদের ত্বক একটু কালো
অর্থাৎ গারো বর্ণের হয়ে যায়। তাই আপনাকে বলছি শীতের সকালে রোদ পোহাবেন ঠিক আছে,
কিন্তু সীমিত পরিমানে। শীতের সকালে কিছু কথা বলার মধ্যে আপনাকে কিছু দিকনির্দেশনা
দিয়ে দিলাম।
শিশিরে ভেজা শীতের সকাল
শিশিরে ভেজা শীতের সকাল, এ সময় সকালের সোনালী রোদ গ্রাম-গঞ্জের মাঠে ঘাটে ও হাটে।
সবুজ ঘাসের উপরে জমা সূর্যালোকিত শিশিরবিন্দু চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। এই দৃশ্য যথার্থই
মনোরমা। শীতের সকালে যখন কথা বলার সময় মুখ থেকে হালকা গরম সাদা ধোয়ার মত বের হয়,
নদী থেকে জলীয় বাষ্প যখন কুয়াশার মাঝে মিশে বাতাসে ভেসে বেড়াই তখন প্রাকৃতিতে এক
অপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয় খালিপায়ে শিশির ভেজা ঘাসে হেঁটে বেড়ালে সুফল পাওয়া
যায়। এছাড়া ভোরের দূষণমুক্ত বাতাসে বুক ভরে নিঃশ্বাস এনে দিতে পারে প্রশান্তি।
ভেজা ঘাসে হাঁটাহাঁটিতে শরীরে রক্তের পরিসঞ্চালন বাড়ে
রাতভর শিশির পড়া ভোর থেকেই দিতন্ত জুড়ে কুয়াশা কৃষকের ফসলি জমি ছেড়ে দেশের
সবুজের সমারোহে দিগন্তজোড়া শীতের সকাল। শীতের সকালে, ছোট ছোট বাচ্চারা তাদের ছোট
ছোট পা দিয়ে যখন শিশির ভেজা ঘাসের উপরে হেটে বেড়ায় মনে হয় ঘাসগুলো তাদের পা বলে
দিচ্ছে। এ যেন এক অপরূপ দৃশ্য আবার অন্যদিকে কৃষকেরা যখন তাদের লাঙ্গল-জোয়াল কুদাল
কাঁধে নিয়ে শিশির ভেজা সের উপর দিয়ে হেটে যায় মনে হয় ঘাসগুলোকে তারা দুমড়িয়ে
মুছরে দিচ্ছে কে যেন এক এক চোখে বিভিন্ন রকম লাগা কাজ করে। শিশির ভেজা সকালে খালি
পায়ে ঘাসের উপরে হেঁটে বেড়া অন্যরকম ন্যাচারাল থেরাপি। পূর্ব আকাশে কুয়াশা ঢাকা
সূর্যের স্নান মুখ মরা রোদের উঠানে মাধুর বিছিয়ে ছেলেমেয়েরা কাঁচা রসে চুমুক
দিয়ে কাপে থর থরিয়ে।
তবু খেজুরের কাঁচা রস তাদের চাই-ই চাই। কারো কারো মা আবার সেই ভোরবেলা উঠে ভাপা
পিঠা তৈরি করে, লেপ গাথার নিচ থেকে ডেকে তাদের ছেলে-মেয়েদেরও হই হই করে ওঠে পরে
বিছানা থেকে। বাড়ির আঙিনায় মাচার উপর ঘরের চালে শিশির ভেজা সিম। বরবটি লাউ আর
কুমড়ার গাছগুলো কি অপরূপ দেখায় শীতের সকালে মাঠ ভরা সরিষার হলুদ ফুল মনে কেড়ে
নেই প্রতিটি মানুষের মন। আমন ধানের সোঁদা গন্ধ ভরে ওঠে আবহমান বাংলার হেমন্ত
সন্ধ্যা সেই সন্ধ্যা রাতে টুপটাপ করে ঝরে পড়ে নিশির শিশির নারিকেলের চিরল পাতার
শরীর বেয়ে গড়িয়ে পড়ে শীতের ক্লান্তি।
শীতের সকালের অনুভূতি
শীতের সকালের অনুভূতি, শীতকাল মানেই কুয়াশা ভরা সকাল, ঠান্ডা বাতাসে ঠান্ডা
অনুভূতি। সূর্য মামার মিষ্টি রোদের অপেক্ষা। শীতকাল মানেই শীতের মোটা কাপড়, আর গরম
পানির গোসল। সব সময় গরম খাবার আর ধোঁয়া উঠানোর গরম চা বা কফি। শীতকাল কিংবা
গরমকাল দুই সময়ে সুবিধা ও অসুবিধা দুইটাই আছে। গরমকালে যেমন সবকিছুই গরম নিয়ে
অসুবিধা ঠিক তেমনি শীতকালে ঠান্ডা নিয়ে অসুবিধা, তবে গরম কালথেকে মানুষ
শীতকালটাকেই বেশি পছন্দ করে। যে যাই পছন্দ করুক আমার কাছে শীতকাল মানেই ভালোলাগার
সময় কিংবা ভালো লাগার প্রতিটি মুহূর্ত।
শৈশবে শীতের সময়ে খেজুরের গাছের নিচে দাঁড়িয়ে উপরের দিকে হা করে থাকতাম। খেজুর
গাছে বাঁধা কলস খুলে ফেলার কারণে এক ফোঁটা এক ফোঁটা করে রস এসে মুখে পড়তো,
সঠিকভাবে হাঁ করতে না পারলে সেই রসের ফোটা কখনো ঠোঁটে, কখনো চোখে আবার কখনো কপালে
এসে পড়তো। শৈশবের সেই দিনের কথা মনে পড়লে এখনো অনেক হাসি পায়। তবে সে গাছগুলো
এখন আমাদের এদিকে আর দেখা যায় না। আমাদের গ্রাম কিংবা আমাদের চারপাশের কোন গ্রামেই
এখন আর খেজুর গাছ দেখা যায় না। শীতকালে সকালের ঘন কুয়াশার মাঝে হাঁটতে কার না
ভালো লাগে। খালি গায়ে শিশির ভেজা ঘাসের উপর পায়ের ছোঁয়া লাগতেই যেন মন ভালো হয়ে
যায়। শীতকালে দিন অনেকটা ছোট হয়ে থাকে। আর এই সময়ে যে কাজই করা হোক না কেন
শরীরের কোন ক্লান্তি অনুভব হয় না সব সময় একটা ভালো লাগা কাজ করে। মন খারাপ হওয়ার
যেন কোনো সুযোগই নেই। ঠান্ডা বাতাসে ঠান্ডা অনুভূতিগুলো মনে হয় সবসময় সতেজ রাখে
মনকে।
শীতকালে বেশ কিছু খাবার রান্না করে খাওয়া হয় যা গরমকালে তেমন খাওয়া হয় না।
বিশেষ করে শীতের পিঠা দুধের তৈরি বিভিন্ন খাবার ও এমন আরো অনেক কিছু। তবে একটা মজার
বিষয় হলো এই শীতকালে পানিকে সবাই অনেক বেশি ভয় পায় ও পানি থেকে এড়িয়ে চলার
চেষ্টা করো, মনে হয় যেন পানি একটা মানুষের জীবনের অনেক বড় শত্রু। আর গোসলের কথা
বলতে গেলে ভয়াবহ অবস্থা কেউ হয়তো দুদিনে একদিনে আবার কেউ সাত দিনে একদিন। আর
হয়তো এই শীতকালকে এত ভালবাসি বলেই তাড়াতাড়ি চলে যায় আবার ঘুরে আসতেও অনেক দেরি
করে ফেলে। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করেই এমন কোন এক দেশে চলে যায়, যে দেশে সব সময় ঠিক
থাকে।। যাইহোক শীতের অনুভূতি মানে নতুন অনুভূতি ভালো লাগার অনুভূতি ভালো থাকার
অনুভূতি।
লেখক এর ফাইনাল মন্তব্য- শীতের সকাল নিয়ে কিছু কথা এ সম্পর্কে
উক্ত আলোচনার মাধ্যমে বুঝতে পেরেছেন যে শীতের সকাল আসলে কেমন হয়, এই আর্টিকেলের
মধ্যে আমি আপনাদের সাথে শীতের সকাল সম্পর্কে অনেক সুন্দর ধারণা দিতে পেরেছি বলে আশা
করি, প্রতিটা মানুষের জীবনে একবার না একবার হলেও এরকম শীতের সকালের মুখোমুখি হতে
হয়েছেন। এবং এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের অনেক ভালো লেগেছে বলে আমি আশা করি।
আবির ইন-ফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url